হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমাম হাদী (আ.)-এর মানুষের প্রতি কত গভীর ভালোবাসা ছিল-তার প্রমাণ এই ঘটনাই যথেষ্ট। এমনকি তাঁর সবচেয়ে কঠোর শত্রু খলিফা মুতাওয়াক্কিল যখন এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তখন মুতাওয়াক্কিলের মা এসে ইমাম হাদী (আ.)-এর নামে মানত করেন। তিনি মানত করেন-যদি তার ছেলের অবস্থা ভালো হয়ে যায়, তবে তিনি ইমামের উদ্দেশ্যে দান করবেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, সুস্থ হয়ে ওঠার পর মুতাওয়াক্কিল আবারও ইমাম হাদী (আ.)-এর প্রতি দুঃসাহস ও অবমাননা শুরু করে। সে আদেশ দেয়-যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, ইমাম হাদী (আ.)-কে ধরে নিয়ে আসতে হবে।
বর্ণিত আছে, যখন সৈন্যরা আসে, তখন ইমাম হাদী (আ.) মাটির ওপর একটি ছোট কক্ষে বসে ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। অত্যন্ত কঠোর ও অমানবিক আচরণের মাধ্যমে তাঁকে সেই অবস্থাতেই জোর করে মুতাওয়াক্কিলের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ, আবারও মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছিল যে ইমামের কাছে অস্ত্র ও ধনসম্পদ রয়েছে। তল্লাশি চালিয়ে তারা দুটি থলি ভর্তি স্বর্ণমুদ্রা (আশরফি) খুঁজে পায় এবং সেই অজুহাতেই ইমামকে নিয়ে আসে।
মুতাওয়াক্কিল এতে খুবই আনন্দিত ও উদ্ধত হয়ে ওঠে। সে মনে করল-এবার তার হাতে এমন একটি প্রমাণ এসেছে, যার মাধ্যমে সে ইমাম হাদী (আ.)-কে নির্যাতন বা এমনকি শহীদ করার পথ খুঁজে পাবে। গর্ব ও অহংকারের সঙ্গে সে সিংহাসনে বসে ইমামের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এখন কী বলবে? তোমার ঘর থেকে যখন এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো পাওয়া গেছে, তখন আর কী যুক্তি আছে তোমার?”
এর উত্তরে ইমাম হাদী (আ.) শান্তভাবে বললেন, এই অভিশপ্তকে বলো
-তার মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করতে। এই জিনিসগুলোর সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক?
এরপর মুতাওয়াক্কিলের মাকে ডেকে আনা হয়। তিনি বলেন,
“হ্যাঁ, তুমি যখন অসুস্থ ছিলে এবং তোমার অবস্থা খুব খারাপ ছিল, তখন আমি ইবনে রেজা (আ.)-এর নামে মানত করেছিলাম। এই স্বর্ণমুদ্রা ও গয়নাগুলো আমি ইমাম হাদী (আ.)-এর উদ্দেশ্যে মানত করেছিলাম, যাতে আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করে দেন।”
এই ঘটনা প্রমাণ করে-আহলে বাইতের শত্রু, এমনকি ইমাম হাদী (আ.)-এর ঘোর বিরোধীর কাছেও তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও মর্যাদার আলো এতটাই প্রবল ছিল যে, সেই চরম পরিস্থিতিতেও তারা ইমামের দরবারেই আশ্রয় খুঁজেছিল।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট